ওজগেকান আসলানের ধর্ষণচেষ্ট ও নির্মম হত্যা,ধর্ষক সুফীর লাশও দাফন করতে দেয়নি।


মেয়েটির নাম ছিল ওজগেকান আসলান। বয়েস উনিশ। সাইকোলোজি পড়তো। মানুষের মনস্তত্ত্ব! অমানুষের মনস্তত্ত্ব পড়া হয়নি তার!

২০১৫ সালে... তুরস্কের এই মেয়েটিকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয় একটা বাসে। আসলানের পিপার স্প্রে'র কাছে কিছুটা অসহায় হয়ে পড়ে ধর্ষণ করতে না পেরে বাসচালক সুফি তাকে ছুরি দিয়ে আঘাত করেছিল শেষে। সিটের নিচে আসলান যখন পড়ে কাতরাচ্ছিল সুফি তখন একটা লোহার রড নিয়ে আঘাত করছিল আসলানের রক্তাক্ত শরীরে- বিরামহীন ভাবে ততক্ষণ- যতক্ষণ না পর্যন্ত আসলান নাড়াচাড়া বন্ধ করে ঘুমিয়ে পড়েছিল চিরনিদ্রায়!

নখ, হাত থেকে যেন কোনো আলামত সংগ্রহ না করতে পারে, তাই আসলানের প্রাণহীন শরীর থেকে দুই হাত কেটে নিয়ে বাকি শরীরটা পুড়িয়ে দেয় সুফি, সুফির বাবা এবং এক বন্ধু।

ধরা পড়ার পর
সুফি সহ বাকি দুইজনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেয়া হয়েছিল। তবে সুফি মারা যায় জেলে এক কয়েদীর হাতেই। মারা যাওয়ার পর পাঁচদিন মর্গে পড়ে ছিল লাশটা- নিজ গ্রামের মাটিতে লাশটিকে দাফন করতে ও দেয়নি গ্রামের লোকেরা।

অথচ আমি আন্দাজ করতে পারি, সুফি কত সহজ ভাবে বেঁচে ছিল এর আগে- মিশেছিল আর দশটা মানুষের মতোন সবার সাথে। মানুষ আলাদা করা সহজ- খোলস ভাঙার বিশেষ একটা মুহূর্তের আগ পর্যন্ত অমানুষগুলো আলাদা করা এত কঠিন কেন?

ইংল্যান্ডের আংলিয়া রাসকিন ইউনিভার্সিটিতে পিএইচডি গবেষণারত ক্রিমিনোলজির ছাত্রী, মধুমিতা। ইন্ডিয়ান এই মেয়েটি, তিহার জেলে থাকা একশত ধর্ষকের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন, গবেষণা করেছেন ওদের মনস্তত্ত্ব আর জানিয়েছেন একটা ভয়ংকর তথ্য! ধর্ষক কখনো উপলব্ধি ই করতে পারেনা যে 'ধর্ষণ' একটি অপরাধ! যারা চুরি করে, তারা জানে এটা চুরি। যারা ডাকাতি করে, তারা জানে এটা ডাকাতি। যারা খুন করে, তারা ও জানে এটা খুন। যারা ধর্ষণ করে- তাদের অধিকাংশ কখনো জানেইনা, এটা ধর্ষণ! একটা ধর্ষক অনেকগুলো মানুষের ভেতর মিশে থাকে তাই, বড্ড স্বাভাবিক আর সাধারণ। মধুমিতার তথ্য অনুযায়ী একটু বেশি মাত্রায় সাধারণ। ধর্ষণ করে এসে এরা সহজ স্বাভাবিক ভঙ্গিতে টং দোকানে বসে চা খেতে খেতে গল্প করবে, থুথু ফেলবে, গপ- সপ করতে করতে পিঠ চুলকাবে, চায়ে লিকার কম হয়েছে বলে হালকা পাতলা চিল্লাচিল্লি করবে...!

১৯৭৭ সালে ১৩৩ জন অপরাধী ও ধর্ষণের শিকার ৯২ জনের
 উপর সমীক্ষা চালিয়ে আমেরিকান জার্নাল অব সাইকাইয়াট্রিতে একটি নিবন্ধ প্রকাশ করা হয়। যেখানে ধর্ষণের কারণ বৈজ্ঞানিকভাবে ব্যাখ্যা করা হয়। ক্ষমতা প্রদর্শন, ক্রোধ ও যৌনতা বেশির ভাগ ধর্ষণের মূল কারণ। বাঙালি যদিও মনে করে, 'পর্ন' এবং 'কাংকি মাগের হিজাব নাই' ই ধর্ষণের প্রধান এবং একমাত্র কারণ.. কিন্তু সত্য হলো- শুধুমাত্র সানি লিওনি কে দেখেই 'দুধের সাধ ঘোলে মেটানো তত্ত্ব' কিংবা লালা ঝরানো 'তেতুলতত্ত্ব' ছাড়াও ধর্ষণের আরো দুইটা প্রধান প্রধান কারণ আছে। এই দুইটা কারণ অনুযায়ী ধর্ষণকে দুইভাগ করা যায়। একটা হলো, পাওয়ার রেপ! যেখানে অস্ত্র, শারীরিক শক্তি, ভয়ভীতি দেখানো হয়। কর্তৃত্ব, পাওয়ার, ক্ষমতা জাহির করার নিমিত্তে দন্ড উথিত হওয়া যাকে বুঝায়! আরেকটা হলো, অ্যাঙ্গার রেপ! ঐ যে, যৌনাঙ্গের ভেতর লোহার রড ঢুকিয়ে দেয়া- নিপল কেটে নেয়া, পুড়িয়ে দেয়া, কাটা ছেঁড়া করা.. এখানে ভিকটিম কে অবর্ণনীয় কষ্ট দিয়ে মেরে ও ফেলা হয়! ধর্ষিতার কষ্ট উপভোগ করে ধর্ষক!

যদিও আমরা একটা ধর্ষক কে ধর্ষক বলি ধর্ষণ করার পর- কিন্তু হুট করে একটা ধর্ষক 'ধর্ষক' হয়ে যায় না। অনেক সময় নিয়ে হয়। একটু একটু করে ধর্ষণ করতে শিখে। চোখে করে, মুখে করে, তারপর শরীরে- তাকে সাহস যোগায় মূর্খ বোকাচোদা সমাজ- বিচারহীনতায় রোজ ঘটে যাওয়া অসংখ্য ঘটনা..
আমরা যত ই যা বলি, ধর্ষক মনে প্রাণে অন্ধের মতোন বিশ্বাস করে- ধর্ষণ তার পুরুষত্ব প্রমানেরই একটা দারুণ পদ্ধতি। সে যে পুরুষ, পৃথিবীতে তার যে একটা কর্তৃত্ব, বিশ্বজয়ের ভাবনা, প্রভুসূলভ মনোভাব, পায়ের তলায় সব পিষে ফেলার অদম্য মানসিকতা... এইসব ই সে জোর করে সামনে থাকা শারীরিক শক্তিতে তারচেয়ে দুর্বল মানুষটির যৌনাঙ্গে গেঁথে দেয় আর বিকৃত আত্মতৃপ্তিতে ভুগে। এবং হতাশার কথা হলো, তাকে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে ঠিক এই পয়েন্টগুলোতেই ইতিউতি করে সাপোর্ট দিয়ে যাচ্ছে ভার্চুয়াল প্লাস রিয়েলিটির অসংখ্য অন্ধ মস্তিষ্কহীন পুরুষ নামক নপুংসক! ধর্ষণ যদি একটি বিশাল ডালপালা ছড়ানো মজবুত বৃক্ষ হয়- তবে এর মুল শেকড় যে মাটি আঁকড়ে ধরে দাঁড়ানো, ঐ মাটিতে রোজ সার দিচ্ছে এইসমস্ত লোকজন। যাদের মধ্যে অধিকাংশ বিবাহিত পুরুষ ই জানে না- স্ত্রী অনুমতি না দিলে তার সাথে জোর করে মিলিত হওয়ার নাম ও ধর্ষণ।

বিকৃত মানসিকতার লোকজন হু হু করে বাড়ছে। উদাহারণ দিই, একটা ধর্ষণের ঘটনা মিডিয়ার নজর পাওয়ার পর পর্ন সাইটে ঐ নামের ধর্ষণের ভিডিও সার্চ দেয়ার হার বেড়ে যায় দ্রুত। কেমন যেন একটু একটু করে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে আমাদের চোখ দুটো, পঁচন ধরছে মস্তিষ্কে, মনুষ্যত্বে!

কখনো ভাবিই না, ওই পৃথিবীটা কেমন হবে? যেখানে কোনো পুরুষকে ভালোবেসে স্পর্শ করার একটা নারী ও খুঁজে পাওয়া যাবেনা! দলা দলা ঘৃণা ছুঁড়ে দেবে ওরা। স্ত্রী, কন্যা, বোন, মা তাকাবে ভীত দৃষ্টিতে! ভালোবেসে ছুঁলেও আঁতকে উঠবে। একগাদা ঘৃণার বাণ্ডিল মুখে ছুঁড়ে দেবে স্কুল- কলেজের মায়া মায়া মুখশ্রীর প্রিয় বন্ধুটিও! যে হাতের আঙুলে আঙুল গলিয়ে সূর্যোদয় দেখা হতো রোজ- এক সন্ধ্যেয় ঐ হাত খুঁজে পাবো না আর- হকচকিয়ে উঠে দেখবো, নরম আঙুলের ফাঁকে ফাঁকে ঘৃণা আটকে আছে, স্পর্শ করতে দেবেনা প্রিয়তমা...

যেমন করে আসলান দেয়নি,
সুফির তথ্যানুযায়ী খুঁজে আসলানের লাশ সনাক্ত করার পর মেডিকেলের মর্গ থেকে ঐ লাশ মিছিল করে নিয়ে গিয়েছিল অসংখ্য নারী। শেষবারের মতোন গোসল করিয়েছিলো আসলানকে...! কবরস্থানে যাওয়া নারীদের নিষেধ! আসলানের জানাযা পড়িয়েছিল আর দাফন করেছিল নারীরাই।
ঘৃণার চূড়ান্ত চূড়ো-
কোনো পু্রুষকে তার মৃতদেহ ছুঁতেও দেয়া হয়নি!

No comments

Powered by Blogger.